আল্লাহর অপ্রিয় সাত ব্যক্তি

রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন কিছু লোকের কথা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যাদের প্রতি আল্লাহর ঘৃণা ও অভিশাপ নাজিল হয়। আবু উমামাহ আল-বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাত শ্রেণির লোক আছে, যাদের দিকে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাকাবেন না, তাদের পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি: (১) মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের মতো স্বভাব ও ভঙ্গি গ্রহণকারী নারী, (৩) দাইয়্যুস (যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতা সহ্য করে), (৪) এমন ব্যক্তি যার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ, অথচ সে তাকে তালাক দেয় না, (৫) যে ব্যক্তি এমন লোকদের সঙ্গে মিলিত হয় যারা আসরের পর জানাজার নামাজ পড়ে, (৬) এবং যে ব্যক্তি কোনো জালিম শাসকের কাছে তার শক্তির বৃদ্ধির জন্য যায়। (৭) অন্যায়ের সহচর।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২২২১২; মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস: ২৩১১)
এই হাদিসটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ হাদিস, ব্যাখ্যা না জেনে এর ওপর আমল করা বা প্রচার করা দুটিই বিভ্রান্তিকর বা বিপদজনক হতে পারে, তাই চলুন, নিম্নে প্রতিটি পয়েন্ট নিয়ে ব্যাখ্যাসহ আলোচনা করা যাক।
মা-বাবার অবাধ্য সন্তান : যে সন্তান বাবা-মায়ের কথা অমান্য করে, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাদের দুঃখ দেয়। সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
পুরুষের মতো ভঙ্গি গ্রহণকারী নারী : যে নারী চুল, পোশাক, ব্যবহার ও স্বভাবে পুরুষদের অনুকরণ করে, সে আল্লাহর কাছে অপ্রিয়। ইসলামে নারীকে নারীর জায়গায় রেখেই মর্যাদা ও সৌন্দর্যে সম্মানিত করা হয়েছে, অথচ সে যদি নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে অন্য লিঙ্গের মতো হতে চায়, তবে তা আল্লাহর অপ্রসন্নতা ডেকে আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর লানত করেছেন সেই পুরুষদের উপর যারা নারীদের অনুকরণ করে, এবং সেই নারীদের উপর যারা পুরুষদের অনুকরণ করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৮৮৫)
দাইয়্যুস ব্যক্তি : যে স্বামী, পিতা বা ভাই পরিবারের নারীদের বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও অনৈতিক কাজে চোখ বুজে থাকে, সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তাদের একজন হলো দাইয়্যুস।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬২)
খারাপ চরিত্রের স্ত্রীর স্বামী : যে জানে তার স্ত্রী অনৈতিক কাজে লিপ্ত, কিন্তু দ্বীনের খাতিরে তাকে সংশোধনের চেষ্টা না করে বরং তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয়। অতি আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে হারাম ও জঘন্য কাজে লিপ্ত আছে জেনেও তার সঙ্গে সংসার করে।
আসরের পর জানাজা পড়ানো ব্যক্তি : এখানে মূলত নিষিদ্ধ তিন সময়ে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল-খুশিমতো ইবাদতের সময় নির্ধারণ করে—সে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না বোঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য, অন্যান্য হাদিস ও ইসলামী আইনবিদ বিশারদদের মতে, আসরের নামাজের পর পুরো সময় জানাজা পড়া নিষিদ্ধ নয়। শেষ বিকেলে সূর্যের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জানাজা পড়া যাবে। সূর্যের রঙ হলুদ হয়ে গেলে তখন জানাজা না পড়ে সূর্য ডোবার জন্য অপেক্ষা করে মাগরিবের পর জানাজা পড়তে হবে।
তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে দেরি করলে লাশের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে, অভিভাবক ও আত্মীয়দের বেশি সমস্যা হয় বা রাতে দাফন করতে অসুবিধা হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে নিষিদ্ধ সময়েও জানাজা আদায় করে নিতে পারবে। (সূত্র : দারুল ইফতা বিন্নুরি টাউন, ফতওয়া : ১৪৪১০৬২০১২৯৭)
অন্যায়কারী শাসকের সহযোগী : যে জালিম শাসকের সঙ্গে হাত মেলায়, তার অন্যায়কে টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তি জোগায়, সে আল্লাহর অভিশপ্ত বান্দা।
অন্যায়ের সহচর : যে অন্যায়ের রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে পাশে দাঁড়ায়, তার পরিণতিও ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অন্যায়কারীদের পক্ষপাত করো না, তা না হলে তোমাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১১৩)
লেখক: শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা।
Post a Comment