রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে টানটান উত্তেজনা ও অস্থিরতার মধ্যেও নির্ধারিত তারিখেই রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক সেতাউর রহমান।
তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় আমাদের নির্বাচনি কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। রাকসু যেহেতু দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, তাই সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। উপাচার্য স্যারও নির্বাচন চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। ২৫ তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাকসুর কোষাধক্ষের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা যেহেতু কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন সেইক্ষেত্রে তারা দায়িত্ব পালন করবেন কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রতিনিধির সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন যে গতকালকের ঘটনার ভিত্তিতেই তারা আজকের কর্মসূচি দিয়েছেন এবং সকল জরুরী সেবা তাদের এই আন্দোলনের আওতামুক্ত। তারই প্রেক্ষিতে ২৫ তারিখেই যেহেতু রাকসু নির্বাচন তাই এটি বর্তমানে একটি জরুরী অবস্থানেই আছে। আমরা আমাদের সকল কার্যক্রম চালু রেখেছি, আমাদের অফিস খোলা রয়েছে এবং আমাদের সকল কার্যক্রমই স্বাভাবিকভাবে চলছে।’
এদিকে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে পুরো ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজমান। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা পূর্ণদিবস কর্মসূচির কারণে প্রচারণার উৎসবমুখর আমেজ এখন আর নেই বললেই চলে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ কয়দিন ধরে প্রার্থীদের প্রচারণায় যে প্রাণচাঞ্চল্য ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তা একেবারেই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। ঘুটিকয়েক প্রার্থী সীমিতভাবে প্রচারণা চালালেও ক্যাম্পাসে ভোটারদের উপস্থিতি নগণ্য।
এ বিষয়ে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’র ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির বলেন, “পোষ্য কোটা একটি মিমাংসিত কিছু হওয়া সত্যেও আবার ফিরে এসেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পোষ্য কোটাকে বিলুপ্ত না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই ইস্যুকে ঘিরে ক্যাম্পাসের আমাদের প্রচার-প্রচারণাও সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। তবে আগামী ২৫ তারিখে যে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তা অবশ্যই নির্ধারিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হতে হবে।”
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মোঃ ফাহিম রেজা বলেন, “আজকে আমাদের কোনো প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মিটিং এর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আমরা আমাদের সকল কার্যক্রম আবার চালাবো।”
এর আগে, পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শুক্রবার কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন, এতে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শনিবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনকে প্রশাসনিক ভবন থেকে ধাওয়া করে জুবেরী ভবনে নিয়ে যান। সেখানে তারা উপ-উপাচার্যসহ, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং হাতাহাতির ঘটনায় উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন আহতও হন।
এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী, রাকসু প্রার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং জুবেরী ভবনের কয়েকটি জানালা ভাঙচুর হয়। পরে রাত ১০টার দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা ১৭টি হল থেকে মিছিল বের করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন এবং নানা ধরণের স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রাত ১টার দিকে প্রশাসন পোষ্য কোটার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে এবং রবিবার বিকেল ৩টায় সিন্ডিকেট মিটিং ডাকে।
Post a Comment