গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সিরিজ অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা?
দেশজুড়ে হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গার্মেন্টস কারখানা, বিমানবন্দর, সরকারি দফতর, গুদামঘর ও শপিং কমপ্লেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একের পর এক আগুনের ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এসব অগ্নিকাণ্ডের বেশ কিছু ঘটনার উৎস রহস্যজনক হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে- এসব কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে পরিকল্পিত নাশকতা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা কিংবা নাশকতা—কোনোটিকেই এখন উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন জরুরি বলে মত দিয়েছেন তারা।
সর্বশেষ শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ৬ ঘন্টারও বেশি সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের তীব্রতায় দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
দেশজুড়ে হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গার্মেন্টস কারখানা, বিমানবন্দর, সরকারি দফতর, গুদামঘর ও শপিং কমপ্লেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একের পর এক আগুনের ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এসব অগ্নিকাণ্ডের বেশ কিছু ঘটনার উৎস রহস্যজনক হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে- এসব কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে পরিকল্পিত নাশকতা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা কিংবা নাশকতা—কোনোটিকেই এখন উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন জরুরি বলে মত দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)–এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নাশকতার বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই তদন্ত করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে। তবে দেশে রাসায়নিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক অসতর্কতা সর্বত্র বিদ্যমান। এর প্রমাণই হলো সাম্প্রতিক এই অগ্নিকাণ্ডগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় আমরা নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারি না। সামগ্রিকভাবে মানুষের নিরাপত্তা-বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ ও আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সম্মান ও দায়বদ্ধতা খুবই কম।’
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘রাসায়নিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। নিয়মিত পরিদর্শন নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তা যথাযথভাবে হয় না। দায়ীদের বিরুদ্ধে কী আইনি শাস্তির বিধান আছে, কিংবা আগের ঘটনার বিচার হয়েছে কিনা? হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনের দুর্বলতা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহির অভাবেই এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। আইনের সংস্কার ও বিচারের নিশ্চয়তা না থাকলে এই অগ্নিকাণ্ডের ধারা বন্ধ হবে না।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা কিংবা নাশকতা-কোনোটিকেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দুদিন পরপরই দেশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। টঙ্গি, মিরপুর, চট্টগ্রাম এবং সর্বশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ইপিজেড ও বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যেগুলো কেপিআই হিসেবে পরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের স্থাপনায় উন্নতমানের ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম থাকার কথা। যদি এমন ব্যবস্থা সত্যিই থাকে, তাহলে সেটি কার্যকর হলো না কেন? ফায়ার টিম থাকার কথা, তারা কেন আগুন লাগার পরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেনি?’
মেজর (অব.) শাকিল নেওয়াজ আরও বলেন, ‘বিমানবন্দর এলাকায় সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব দুটি ফায়ার স্টেশন রয়েছে। মাত্র ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে। তারা কি সময়মতো সংবাদ পেয়েছিল? পেলে তারা সঠিকভাবে রেসপন্স করতে পারল না কেন? আর আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল কেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘ওই স্থাপনায় কর্মরত ব্যক্তি বা মালামালের মালিকদের মধ্যে কোনও বিরোধ ছিল কি না, দেনা-পাওনা নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল কি না, সেগুলোও তদন্তের আওতায় আনা উচিত। কারণ এয়ারপোর্টে হাজার হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে। সেখানেও স্বার্থ সংঘাতের সম্ভাবনা থাকতে পারে।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পুরো সিস্টেমের কোথাও কোনও গলদ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বিমানবন্দর এলাকায় দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাই সক্রিয়, তারা কোনও আগাম তথ্য পেয়েছিল কি না। আর পেলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল কি না- এই বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা জরুরি।’
শনিবার সন্ধ্যার পর বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার স্থান পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী কারণে আগুন লেগেছে সেটা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হবে। তার আগে আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত ফ্লাইট ওপেন করা।’
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গভীরভাবে অবগত রয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও জানিয়েছে সরকার।
শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’
🎁 Your Special Offer is Loading...
Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.
⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment