মহানবী (সা.) যাদের ভাগ্যবান বলেছেন
মানুষের জীবনে সুখ ও দুঃখের উৎস শুধু সম্পদ বা পদমর্যাদা নয়; বরং কিছু বাস্তব উপাদান আছে, যেগুলো জীবনকে শান্তিময় বা কষ্টকর করে তোলে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে চমৎকার বাস্তব নির্দেশনা দিয়েছেন—
عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبيِ وَقَّاصٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعٌ مِنَ اَلسعَادَةِ : الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ وَالْمَسْكَنُ ألوَاسِعُ وَاَلجَارََُُّ الصَّالِحُ وَالْمَرْكَبُ اَلهَنِيءُ وَأَرْبَغ مِنَ اَلشًقَاوَةِ : اَلْجَارُ السُّوءُ وَألْمَرْأَةُ اَلسُّوءُ وَالْمَسْكَنُ اَلضيقُ وَالْمَرْكَبُ السُّوءُ
রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি; সাধ্বী স্ত্রী, প্রশস্ত বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী স্ত্রী, সংকীর্ণ বাড়ি এবং খারাপ সওয়ারী (গাড়ি)।’ (ইবনে হিব্বান ৪০৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৫৫৬, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৮২ নং)
হাদিসের ব্যাখ্যা
এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের জীবনে সুখ ও দুঃখের বাস্তব উৎসগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
এগুলো এমন চারটি বিষয়ের সমষ্টি, যেগুলো প্রত্যক্ষভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রশান্তি বা কষ্ট সৃষ্টি করে। ইসলাম মানুষের আত্মিক জীবনের পাশাপাশি পার্থিব জীবনকেও সমন্বিতভাবে দেখেছে; তাই মহানবী (সা.) এখানে দুনিয়ার বস্তুগত দিকের মধ্যেও সুখ ও সৌভাগ্যের চাবিকাঠি নির্দেশ করেছেন।
(১) সাধ্বী স্ত্রী সুখ ও শান্তির আধার
‘সাধ্বী স্ত্রী’ বা الصالحة المرأة এমন স্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে যিনি দ্বীনদার, স্বামীর প্রতি অনুগত, তার মানসম্মান ও সম্পদ রক্ষা করেন এবং ঘরকে প্রশান্তির আবাস বানান। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবী একটি ভোগসামগ্রী, আর পৃথিবীর সর্বোত্তম ভোগসামগ্রী হলো একটি সৎ স্ত্রী।
” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৭)
একজন ধার্মিক ও সদাচারিণী স্ত্রী পরিবারে স্বর্গীয় প্রশান্তি এনে দেয়, স্বামীর দ্বীন ও চরিত্র সংরক্ষণে সহায় হয়। বিপরীতে, অসতী স্ত্রী দুঃখ ও অশান্তির উৎস। তাই হাদিসে এটিকেই প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।
(২) প্রশস্ত বাড়ি দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক
প্রশস্ত ঘর কেবল বিলাসিতা নয়; বরং মানসিক শান্তির জন্য এক বাস্তব চাহিদা।
সংকীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষের চিন্তা, ইবাদত, ও পারিবারিক সম্পর্ক ব্যাহত হয়। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের ধর্ম। যেখানে শারীরিক স্বস্তিও আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে গণ্য।
(৩) সৎ প্রতিবেশী— সমাজজীবনের নিরাপত্তা ও স্বস্তি
প্রতিবেশী হলো মানুষের নিকটতম সামাজিক পরিমণ্ডল। একজন সৎ প্রতিবেশী আশেপাশে শান্তি, সাহায্য ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি করেন।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাস করে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)
ভালো প্রতিবেশী মানে এমন একজন, যার পাশে বাস করলে মন শান্ত থাকে, ভয় থাকে না, বরং নিরাপত্তা অনুভব হয়। বিপরীতে, অসৎ প্রতিবেশী জীবনের এক স্থায়ী দুঃখ।
(৪) সচল সওয়ারী (গাড়ি, বাহন) চলাচলের সহজতা
রাসুল (সা.) এর যুগে এটি ছিল উট, ঘোড়া বা খচ্চর; আজকের যুগে এর প্রতীক হলো গাড়ি, মোটরবাইক ইত্যাদি। একটি ভালো বাহন চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়, কর্মজীবনকে সহজ করে এবং সময় বাঁচায়। খারাপ বাহন বিপরীতে কষ্ট, বিলম্ব ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের চার উপাদান
হাদিসের দ্বিতীয় অংশে রাসুল (সা.) সতর্ক করেছেন সেই চার জিনিস সম্পর্কে, যেগুলো জীবনকে কঠিন করে তোলে:
অসৎ প্রতিবেশী — ভয়, অপবাদ, ঝগড়া, বা ক্ষতি করে এমন ব্যক্তি।
অসতী স্ত্রী — যিনি স্বামীর আনুগত্য না করে বিপরীত আচরণ করেন, ঈমানহীনতায় পতিত করেন।
সংকীর্ণ বাড়ি — যেখানে না প্রশান্তি, না আরাম।
খারাপ বাহন — যা সবসময় ভেঙে পড়ে বা কষ্ট দেয়।
এসব কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন জটিল হয়ে পড়ে এবং ইবাদতের মনোযোগও ব্যাহত হয়।
হাদিসটি কেবল বস্তুগত বিষয় নয়, বরং আল্লাহর অনুগ্রহ চেনার শিক্ষা দেয়। এসব নেয়ামত পেলে মানুষ যেন আল্লাহর শোকর আদায় করে, আর বঞ্চিত হলে ধৈর্য ধারণ করে—এটাই প্রকৃত সৌভাগ্য।
মহানবী (সা.) মানুষের জীবনের বাস্তব সুখ-দুঃখের কারণগুলোকে চারটি নির্দিষ্ট উদাহরণে প্রকাশ করে দেখিয়েছেন যে—ইসলাম শুধু আখিরাতের ধর্ম নয়, বরং দুনিয়ার কল্যাণ ও প্রশান্তিরও দিশারি
🎁 Your Special Offer is Loading...
Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.
⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment