পেটের ক্যা’ন্সারের ৫টি ভয়ংকর ধরণ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
পেটের ক্যান্সার শুনলেই অনেকের মনে ভেসে ওঠে নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ বা সহজে শনাক্তযোগ্য একটি রোগের ধারণা। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি অনেক ভিন্ন। পেটের ক্যান্সারের উপসর্গ, বৃদ্ধি, কারণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। কিছু ক্যান্সার ধীরে ধীরে বাড়ে এবং প্রায় উপসর্গহীন থেকে যায়, আবার কিছু ক্যান্সার অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, পেটের কয়েকটি বিরল হলেও আক্রমণাত্মক ক্যান্সারের ধরন রয়েছে, যেগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি করে।
অ্যাডেনোকার্সিনোমা: সবচেয়ে বেশি দেখা যায়
“পেটের ক্যান্সার” বললেই সাধারণত অ্যাডেনোকার্সিনোমাকেই বোঝানো হয়। মোট পেটের ক্যান্সারের প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই এই ধরনের। এটি মূলত পাকস্থলীর আবরণে থাকা শ্লেষ্মা ও হজমরস উৎপাদনকারী কোষ থেকে তৈরি হয়।
অ্যাডেনোকার্সিনোমার আবার দুটি ধরন রয়েছে।
ইনটেস্টাইনাল অ্যাডেনোকার্সিনোমা ধীরে বাড়ে এবং অনেক সময় নির্দিষ্ট জিনের মিউটেশনের কারণে নতুন লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধে সাড়া দেয়। এটি সাধারণত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণের সঙ্গে যুক্ত।
ডিফিউজ অ্যাডেনোকার্সিনোমা দ্রুত ও অনিয়মিতভাবে বেড়ে ওঠে, ফলে চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে। এটি তরুণদের মধ্যেও তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
প্রধান উপসর্গগুলো হলো অল্প খাবার খেয়েই পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি, হজমে গ্যাঁজলা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
লিম্ফোমা সাধারণত লিম্ফ নোডে হয়, তবে পাকস্থলী থেকেও শুরু হতে পারে। এটিকে বলা হয় প্রাইমারি গ্যাস্ট্রিক লিম্ফোমা। মোট পেটের ক্যান্সারের প্রায় ৫ শতাংশ এমন ধরনের, যা অ্যাডেনোকার্সিনোমা থেকে ভিন্ন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অনেক ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসাযোগ্য।
এটির দুটি ধরন আছে।
এমএএলটি (মিউকোসা অ্যাসোসিয়েটেড লিম্ফয়েড টিস্যু) লিম্ফোমা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং সাধারণত এক জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এটি হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ডিফিউজ লার্জ বি-সেল লিম্ফোমা (ডিএলবিসিএল) অপেক্ষাকৃত গুরুতর এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস, বুকজ্বলা, বমি ইত্যাদি।
জিআইএসটি: বিরল হলেও মারাত্মক
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোমাল টিউমার বা জিআইএসটি খুবই বিরল ধরনের ক্যান্সার, যা পাকস্থলীর দেয়ালের বিশেষ স্নায়ুকোষ থেকে উৎপন্ন হয়। এগুলো আসলে সফট টিস্যু সারকোমার একটি ধরন।
প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে টিউমার বড় হলে পেটে গিট্টি বা ব্যথা, মলের সঙ্গে রক্ত, অবসাদ, রক্তবমি এবং অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া দেখা যায়।
চিকিৎসায় লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধ যেমন ইমাটিনিব ভালো সাড়া দেয়। পাশাপাশি অস্ত্রোপচারও কার্যকর ভূমিকা রাখে। জিআইএসটি পুরো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে হতে পারে, তবে প্রায় ৬০ শতাংশই পাকস্থলীতে এবং ৩০ শতাংশ ক্ষুদ্রান্ত্রে দেখা যায়।
কারসিনয়েড টিউমার: নীরব ঘাতক
পেটের কারসিনয়েড টিউমারকে বলা হয় নীরব ঘাতক। প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলোতে উপসর্গ তেমন দেখা যায় না। তবে পরবর্তী সময়ে পেটের ক্র্যাম্প, মলত্যাগে পরিবর্তন, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস, বমি বমি ভাব এবং বুকজ্বলা হতে পারে।
প্রাথমিকভাবে ছোট টিউমার এন্ডোস্কোপিক অস্ত্রোপচারে সরানো সম্ভব। বড় বা ছড়িয়ে পড়া টিউমারের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি, লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধ বা বিশেষ কিছু লিভার-ভিত্তিক চিকিৎসা প্রযোজ্য হয়।
স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা: বিরল ও আক্রমণাত্মক
এটি পেটের সবচেয়ে বিরল ক্যান্সার। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা-সাহিত্যে শতাধিকেরও কম কেস নথিভুক্ত হয়েছে। সাধারণত ত্বক, ফুসফুস বা খাদ্যনালীতে দেখা গেলেও খুব কম ক্ষেত্রে পাকস্থলীতে দেখা যায়।
পাকস্থলীর গ্রন্থিযুক্ত কোষে আলসার ও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি খাদ্যনালীর নিচ থেকে শুরু হয়ে পাকস্থলীতে ছড়িয়ে পড়ে।
উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার পেটব্যথা, রক্তস্বল্পতা ও অকারণে ওজন হ্রাস। এই ক্যান্সার অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হওয়ায় চিকিৎসায় সাধারণত বড় অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়।
পেটের ক্যান্সার একটি জটিল ও বহুমাত্রিক রোগ। এর সব ধরনের ক্যান্সার একইভাবে বাড়ে না বা একইভাবে চিকিৎসাযোগ্য নয়। কিছু ক্যান্সার ধীরে বাড়ে, আবার কিছু হঠাৎ করেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই অল্প উপসর্গ পেলেও দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা হলে এই ভয়ংকর রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
🎁 Your Special Offer is Loading...
Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.
⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment