শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেবে ভারত? আল-জাজিরার অনুসন্ধানে যা জানা গেলো

 শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেবে ভারত? আল-জাজিরার অনুসন্ধানে যা জানা গেলো



জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। গত বছর (২০২৪) বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার দায়ে ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নয়াদিল্লি এখনো তা করেনি। এই বিষয়টি গত ১৫ মাস ধরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আখতারের মতো অনেকেই রায়টিকে ‘ন্যায়বিচারের এক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন। বিক্ষোভকালে নিহত বন্ধুদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এটি একটি পদক্ষেপ বলে সীমা আখতার আল-জাজিরাকে জানান। তবে তিনি চান, শেখ হাসিনাকে ঢাকাতেই ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেছে, হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নয়াদিল্লির জন্য ‘আবশ্যিক দায়িত্ব’। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হাসিনাকে ক্রমাগত আশ্রয় দেওয়া হলে তা হবে ‘অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অসম্মান’।

ভারতের রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নয়াদিল্লি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না।

নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেছেন, প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের’ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী একটি ধারা আছে, যা ভারত ব্যবহার করতে পারে।

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, “নয়াদিল্লি কীভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে?” তিনি মনে করেন, হাসিনাকে ভারতে থাকতে দিয়ে ভারত তার মিত্রদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার নৈতিক প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।


ভরদ্বাজ মনে করেন, ভারত এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে। নয়াদিল্লি মনে করে, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা ‘ভারতবিরোধী শক্তিকে’ বৈধতা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশীয় বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারতে হাসিনার উপস্থিতিটা ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে কাঁটা হয়ে থাকবে’।

শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য (জিডিপি বৃদ্ধি) ঘটলেও, নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলের বর্জন, হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংস দমন অভিযানের পর বিক্ষোভটি হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয় এবং ৫ আগস্ট তিনি ভারতে পালিয়ে যান।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সহযোগিতা এবং ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ভারতের সঙ্গে হাসিনার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত মিত্রতা রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নয়াদিল্লিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন।


বর্তমানে নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যকার সম্পর্ক শীতল থাকলেও ভারত বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সমীকরণ পাল্টানো: ভারতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সূচনা হতে পারে।

জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, হাসিনাকে আর কখনও সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ভারতের উচিত ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নাজুক হলেও, প্রত্যর্পণের এজেন্ডা ছেড়ে উভয় দেশের একে অপরের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখা প্রয়োজন।

কুগেলম্যানের মতে, হাসিনার রাজনৈতিক প্রভাব এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা যায় না। এ ধরনের পরিবারকেন্দ্রিক দলগুলো সাময়িকভাবে কঠিন সময়ের মধ্যে পড়লেও পুরোপুরি বিলীন হয় না।


🎁 Your Special Offer is Loading...

Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.

10s

⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment

Previous Post Next Post