দই খেলে কি সত্যিই আয়ু বাড়েকি বলে বিশেষজ্ঞরা

 

দই খেলে কি সত্যিই আয়ু বাড়ে

 কি বলে বিশেষজ্ঞরা 

 


মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা—গত বছর পর্যন্ত ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট যখন তিনি মারা যান, তখন তাঁর বয়স ছিল ১১৭ বছর। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বিজ্ঞানীরা তাঁর স্বাস্থ্য, খাবার আর জীবনযাপন নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন, এত দিন বাঁচার রহস্য কী? আর সম্প্রতি তাঁরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। যার সঙ্গে সম্পর্ক আছে দইয়ের।স্পেনের বার্সেলোনার জোসেপ ক্যারেরাস লিউকেমিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. মানেল এস্টেলার বলেছেন, ‘তিনি কখনো ধূমপান বা মদ্যপান করেননি।


যত দিন পেরেছেন কর্মক্ষম ছিলেন। গ্রামে থাকতেন। পরিমিত ব্যায়াম করতেন, বেশির ভাগ সময় দিনে এক ঘণ্টা হাঁটতেন। খাবারে থাকত অলিভ অয়েল, ভূমধ্যসাগরীয় স্টাইলের খাবার, আর দই।’


মজার ব্যাপার হলো, মারিয়া ব্রানিয়াস চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খেতেন না। কিন্তু তিনি প্রতিদিন তিনবার কাতালোনিয়ার একটা স্থানীয় ব্র্যান্ডের দই খেতেন, যা প্রোবায়োটিকের চমৎকার উৎস।


২০২২ সালে তিনি সামাজিক মাধ্যমে দই নিয়ে তাঁর ভালোবাসার কথা লিখেছিলেন। বলেছিলেন, ‘দই জীবন দেয়।’


গবেষকেরা বলছেন, প্রতিদিন দই খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে মারিয়ার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ছিল সুস্থ–সবল তরুণদের মতো।


আর তাঁর জৈবিক বয়স ছিল প্রকৃত বয়সের চেয়ে ২৩ বছর কম! মানে আদতে বয়স ১১৭ বছর হলেও তাঁর শরীরটা ছিল প্রায় ৯৪ বছর বয়সীর মতো।


এতটুকু পড়ার পর কি ভাবছেন, কাল থেকেই নিয়মিত দই খাব? না, এমনটা করবেন না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু দই নয়, মারিয়ার পুরো জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস আর ভালো জিন মিলে তাঁকে দীর্ঘজীবী করেছে। আর তাঁর দীর্ঘ জীবনের পেছনে দইয়ের গুরুত্ব কতটা, তা নিয়েও দরকার আরও গবেষণা।


তবে প্রশ্ন হলো, দইয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা আদতে কী? প্রতিদিন এক বাটি দই কি সত্যিই আমাদের বেশি দিন বাঁচতে সাহাদইয়ের উপকারিতা

অনেকেই মনে করেন, দই স্বাস্থ্যকর খাবার। তাই অনেক পরিবারের ফ্রিজে নিয়মিত দই থাকে। কিন্তু আদতে কী উপকার পাওয়া যায় দই থেকে?


পুষ্টিবিদ অ্যালেক্সা মুলান বলেছেন, টাটকা দই আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে সুস্থ রাখে। টাটকা দই মানে যাতে ভালো ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে। এতে থাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম আর ম্যাগনেশিয়াম। এসব উপাদান হাড়ের শক্তি, মাংসপেশি আর বিপাকে সাহায্য করে।


দইয়ের ল্যাকটোব্যাসিলাস ও বিফিডোব্যাকটেরিয়ামের মতো জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রদাহ কমায়, হজম ভালো করে আর কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

অ্যালেক্সা মুলান, পুষ্টিবিদ

দই কি আয়ু বাড়াতে পারে

গবেষক মুলান বলছেন, দইয়ের জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সত্যিই সাহায্য করতে পারে। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত দই বা গাঁজানো খাবার খান, তাঁদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ কম। অন্যান্য আরও গবেষণায় দেখা গেছে, দই খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে এবং মানুষ দীর্ঘদিন সুস্থভাবেমস্তিষ্ক ভালো রাখে দই

শুধু পেটের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের জন্যও দই উপকারী হতে পারে। আমাদের অন্ত্র আর মস্তিষ্কের মধ্যে একটা যোগাযোগ আছে। একে বলে ‘গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস’।


এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ সপ্তাহ প্রোবায়োটিক খাওয়ালে আলঝেইমার্স ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদের স্মৃতিশক্তি বাড়ে। দইয়ে আছে প্রোবায়োটিক। ২০২৪ সালের আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন দই খান, তাঁদের মস্তিষ্ক অন্যদের চেয়ে ভালো কাজ করে।


কোন দই সবচেয়েবাজারে অনেক ধরনের দই পাওয়া যায়। সাধারণ টক দই, মিষ্টি দই, কম চর্বিযুক্ত দই, ফলের দই। আপনি কোনটা খাবেন?


সবচেয়ে ভালো সাধারণ টক দই। এতে প্রোটিন বেশি আর চিনি কম বা একেবারেই নেই। পাশাপাশি এতে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। তবে কিছু দই ক্ষতিও করতে পারে।


যেমন মিষ্টি আর প্রক্রিয়াজাত দই এড়িয়ে চলা ভালো। এসবে সাধারণত জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে না। এ ছাড়া চিনি বেশি থাকে বলে ওজন বাড়ে। তাই যে দইয়ে শুধু দুধ আর জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেসবই খাওয়া ভাদই পছন্দ না করলে কী করবেন

সবাই দই পছন্দ করেন না কিংবা খেতে পারেন না। মিষ্টি দই খেলেও অনেকে টক দই খেতে চান না। তাঁরা কী করবেন?


মুলান বলছেন, ‘যাঁরা টক দই পছন্দ করেন না, তাঁরা প্রোবায়োটিক আছে, এমন অন্য খাবার খেতে পারেন। যেমন কিমচি নামে একধরনের কোরীয় সালাদ, সাওয়ারক্রাউট নামে বাঁধাকপির আচার কিংবা কম্বুচা চা। পাশাপাশি প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খান। রঙিন ফল আর সবজি খান। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। দিনে সম্ভব হলে ১০ হাজার কদম হাঁটুন। যোগব্যায়াম করুতাহলে কি প্রতিদিন দই খাওয়া উচিত

মারিয়ার জীবন দেখে বোঝা যায়, তাঁর জীবনে দই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটা অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প বটে। কিন্তু তাঁর পুরো জীবনের এটা একটা ছোট অংশ মাত্র।


জিন, জীবনযাপন, সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস মিলে তিনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। প্রতিদিন যে তিন বাটি দই খেতেই হবে, এমন নয়। এক বাটি খেলেও যথেষ্ট।


শুধু দই নয়। কিমচি, সাওয়ারক্রাউট, কম্বুচা আর অন্যান্য গাঁজানো খাবারেও জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া আছে। এসবে আরও অনেক পুষ্টি আছে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য আর দীর্ঘ জীবন পেতে সাহায্য করে।


অর্থাৎ দই চমৎকার খাবার নিঃসন্দেহে। এটা আপনার অন্ত্র, হাড়, মাংসপেশি এমনকি মস্তিষ্কের জন্যও ভালো। কিন্তু শুধুই দই যথেষ্ট নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে সামগ্রিক জীবনযাপন আর খাদ্যাভ্যাস ভালো রাখতে হবে।


মারিয়া শুধু দই খেয়েই ১১৭ বছর বাঁচেননি। তিনি ধূমপান করেননি, মদ্যপান করেননি, হেঁটেছেন, কাজ করেছেন, গ্রামে থেকেছেন, ভালো খাবার খেয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর দীর্ঘ জীবন।


তবে আজ থেকে যদি আপনি এক বাটি দই খাওয়া শুরু করেন, তাতে হয়তো খারাপ কিছু হবে না। বরং উপকার পাবেন। হয়তো প্রতিদিন এক বাটি দই হতে পারে আপনার সুস্থ জীবনযাপনের জন্য একটা ছোট্ট পদক্ষেপ!ন।’লো। ভালো বাঁচে।য্য করতে পারে

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post