হত্যার পর মরদেহ ফেলা হচ্ছে নদীতে

 হত্যার পর মরদেহ ফেলা হচ্ছে নদীতে



খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা। যার এক তৃতীয়াংশ অশনাক্ত। মিলছে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ও হত্যাকাণ্ড—এই তিন ধরনের মৃতদেহ। এরমধ্যে অধিকাংশ ঘটনায়ই হত্যাকাণ্ড। বেশিরভাগই স্থলভাগে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


খুলনা নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২২ মাসে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭৩টিরও বেশি মরদেহ। তার মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে গেল ১০ মাসে মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত নদ-নদী থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।


নৌপুলিশের তথ্য মতে, ২০২৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু খুলনায় মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আরও অন্তত ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৭ অক্টোবর নিখোঁজের তিন দিন পর দাকোপের বাজুয়ার চুনকুড়ি নদী থেকে আশিষ সরকারের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিনে পাইকগাছা উপজেলার সোনাদানা ইউনিয়নের শিবসা নদীর চর থেকে ইকরাম হোসেন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এর আগের দিন ১৬ অক্টোবর পাইকগাছার জিরবুনিয়া খাল থেকে অজ্ঞাত (৪০) যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, হত্যার পর যেসব মরদেহ ফেলে দেওয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই অজ্ঞাত থাকছে। এসব মরদেহ শনাক্তের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্ত করা হলে অধরাধীদের সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হতো।


খুলনা নৌপুলিশ সুপার ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে যে মৃতদেহগুলো পাই সেগুলো নিয়ে কাজ করি। আমরা তিন ধরনের মৃতদেহ পাচ্ছি। এরমধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত। গোসল করতে গিয়ে, নৌকা থেকে পড়ে, পরস্পর নৌকা-ফেরিতে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছে এমন। দ্বিতীয়ত কিছু আত্মহত্যার ঘটনায় পাওয়া যায়। আর তৃতীয়ত আমরা কিছু পাচ্ছি হত্যাজনিত। হত্যার মধ্যেও আবার দুই ক্যাটাগরি রয়েছে। একটি নবজাতক। এক-দুই দিন বয়সী নবজাতককে তার বাবা-মা ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। আর পাচ্ছি বয়স্ক হত্যাজনিত। এসব ঘটনায় মামলা নিয়ে তদন্ত করছি। তিন ধরনের মধ্যে হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মৃতদেহ বেশি পাচ্ছি।


তিনি আরও বলেন, নদ-নদী থেকে গত বছরের তুলনায় মৃতদেহ উদ্ধার চলতি বছরে বেড়েছে। গত বছর যে পরিমাণ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত সেই পরিমাণ উদ্ধার করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়েছে।


নৌপুলিশ সুপার বলেন, নবজাতক বাদ দিয়ে পূর্ণ বয়স্ক মৃতদেহ যেগুলো পাই তার মধ্যে অর্ধগলিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন কাজ। আর যেগুলোর ফিঙ্গার প্রিন্ট পাই এবং নিখোঁজ জিডি আছে কিনা খোঁজ করে পরিচয় পাওয়া গেলে তদন্তের অগ্রগতি ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়। যতোগুলো হত্যাকাণ্ডজনিত মামলা রয়েছে এর কোনোটিই আসলে নদীর ওপরে নয়। স্থলভাগে যেই সমস্ত ঘটনায় হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, সেটা পারস্পারিক দন্দ্ব বা সম্পত্তির বিষয়ে থাকতে পারে, মাদক-সংক্রান্ত হতে পারে। যেগুলো স্বাভাবিক ঘটনা, সেগুলো ওখানে (স্থলভাগে) ঘটে কিন্তু মৃতদেহটি নদীতে ফেলে দেয় তথ্যপ্রমাণ লুকানোর জন্য। আমাদের নদীকেন্দ্রীক চলাফেরাই বেশি। এই ঘটনাগুলোতে আমরা বেশি মনোযোগ দিই। স্থলভাগের ঘটনাগুলোতে আমাদের পদচারণা কম। নদীকেন্দ্রীক ঘটনাগুলোতে আমাদের গোয়েন্দারা থাকে।

তিনি বলেন, স্থলভাগের হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কোনো র‌্যাকেট আছে কিনা? কোনো চক্র আছে কিনা? সেটার তথ্য নতুন করে নিতে অনেক সময় আমাদের বিলম্ব হয়ে যায়। তার পরও দুই জায়গাতেই মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে লোকবলের কিছুটা সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে যদি আমাদের সাপোর্ট বেশি থাকতো তাহলে আরও কম সময় নিয়ে হয়ত ব্যাপারটা সমাধান করতাম বা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম।”

🎁 Your Special Offer is Loading...

Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.

10s

⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment

Previous Post Next Post