ভাইরাল ওজন কমানোর বড়িতে ঝুঁকছে তরুণ-তরুণীরা, ডেকে আনছে মহাবিপদ!

 ভাইরাল ওজন কমানোর বড়িতে ঝুঁকছে তরুণ-তরুণীরা, ডেকে আনছে মহাবিপদ!



হঠাৎই তুমুল আলোচনায় টিকটকে ভাইরাল এক ওষুধ। ‘মলিকিউল প্লাস’ নামে এই ওজন কমানোর বড়ি দিনে দুবার করে সেবন করে দুই সপ্তাহেই আসছে অবিশ্বাস্য ফল! সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককেই এই বড়ি সেবনে ওজন কমাতে দেখে অনলাইনে লেখে গেছে অর্ডারের হিড়িক। কিন্তু, এরই মধ্যে এই বড়ির মারাত্মক প্রভাবও সামনে এসে গেছে। জানা গেছে, অজান্তেই মহাবিপদ ডেকে এনেছেন এই ‘মলিকিউল প্লাস’ সেবনকারীরা। 


মলিকিউল প্লাস’ নামে এই দ্রুত ওজন কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া বড়ি ভাইরাল হয়েছে এ বছরের শুরুতে; রাশিয়ান টিকটকে। তরুণ-তরুণীদের ফিড তখন ভরে যেতে শুরু করে বিভিন্ন আকর্ষণীয় ক্যাপশনে; যেমন— ‘মলিকিউল খাও আর খাবারের কথা ভুলে যাও’, বা ‘তুমি কি ক্লাসের পেছনে ঢিলে হয়ে যাওয়া পোশাকে বসে থাকতে চাও?’ 


ক্লিপগুলোতে দেখা যাচ্ছিল, ফ্রিজ ভর্তি নীল রঙের বাক্স, যাতে ছিল হলোগ্রাম আর ‘মলিকিউল প্লাস’ এর লেবেল।

টি


কটকে ভাইরাল হওয়ার পরই এই বড়ির জন্য অর্ডারের পর অর্ডার আসতে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে, আর টিনেজাররাও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ‘ওজন কমানোর যাত্রা’ শেয়ার করতে থাকে।


অনেকের মতো এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেন মারিয়া নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীও। জনপ্রিয় একটি অনলাইন সাইট থেকে এই বড়িটি কিনে নেন তিনি। এরপর দিনে দুটি করে বড়ি সেবন শুরু করেন তিনি। মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই দেখা গেল তার মুখ অবিশ্বাস্যরকম শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষুধা পুরোপুরি চলে গেছে।


এই অবস্থা মারিয়ার মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি করে এবং তার মনে নেতিবাচক চিন্তা আসতে শুরু করে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই বড়িগুলো আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছিল। আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, এমনকি পানি পানেরও না। আমি নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। আমি অনবরত ঠোঁট কামড়াতাম আর গাল চিবোতাম। এমন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।


মলিকিউল প্লাসের অন্যান্য সেবনকারীরাও চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া, কাঁপুনি এবং অনিদ্রার মতো সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। আর অন্তত তিনজন স্কুলছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।



চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সাইবেরিয়ার চিতা শহরের এক স্কুলছাত্রী মলিকিউল ওভারডোজ করার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, সে গরমকালের আগেই দ্রুত ওজন কমাতে চাইছিল।


আরেক স্কুলছাত্রীর মা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তার মেয়ে একবারে বেশ কয়েকটি বড়ি খাওয়ার পর তাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি করতে হয়েছিল।


আর মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর হ্যালুসিনেশন এবং প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। জানা গেছে, স্কুলে তার ওজন নিয়ে কটুক্তি করায় সে এক বন্ধুকে এই বড়িটি কিনে দিতে বলেছিল।


মলিকিউল বড়ির প্যাকেজিংয়ে প্রায়শই ‘প্রাকৃতিক উপাদান’ যেমন ড্যান্ডেলিয়ন রুট এবং মৌরি বীজের নির্যাসের কথা লেখা থাকে।


কিন্তু এ বছরের শুরুতে, রাশিয়ান সংবাদপত্র ‘ইজভেস্টিয়া’র সাংবাদিকরা অনলাইন থেকে কেনা কিছু বড়ি পরীক্ষার জন্য জমা দেন এবং দেখতে পান যে সেগুলোতে ‘সিবুট্রামিন’ নামক একটি পদার্থ রয়েছে।


১৯৮০-এর দশকে এই ‘সিবুট্রামিন’ হতাশারোধী ওষুধ হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হলেও, পরে ক্ষুধা নিবারক হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, সিবুট্রামিন হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অথচ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুবই সামান্য।


২০১০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ এটি। যুক্তরাজ্য, ইইউ, চীনসহ অন্যান্য দেশেও এটি অবৈধ।


তবে, রাশিয়ায় এটি এখনও স্থূলতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। অবশ্য, শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এবং প্রেসক্রিপশন দিয়েই পাওয়া যায় এই ওষুধ।


প্রেসক্রিপশন ছাড়া সিবুট্রামিন কেনা-বেচা একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যক্তি ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে এটি দেদার বিক্রি করছে।


আরটিভি/এসএইচএম


🎁 Your Special Offer is Loading...

Please wait a moment. You'll be redirected automatically after the countdown.

10s

⏳ Stay here — your offer will open in a new page.
✅ Redirect happens only once per session.

Post a Comment

Previous Post Next Post